খেলা

কোকো গফ ফ্রেঞ্চ ওপেন ২০২৫ জিতলেন, আরিনা সাবালেঙ্কাকে হারিয়ে দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা অর্জন

আমেরিকান তারকা কোকো গফ ফ্রেঞ্চ ওপেন ২০২৫-এর মহিলা সিঙ্গেলস ফাইনালে বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় আরিনা সাবালেঙ্কাকে একটি রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ৬-৭ (৫-৭), ৬-২, ৬-৪ স্কোরে পরাজিত করে তাঁর দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জিতে নিয়েছেন। রোলাঁ গারোসের কোর্ট ফিলিপ-শাত্রিয়েরে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে গফ প্রথম সেট হারলেও অসাধারণ প্রত্যাবর্তন করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেটে দাপট দেখিয়ে জয় ছিনিয়ে নেন

ম্যাচের গতিপ্রকৃতি
ম্যাচের শুরুটা ছিল সাবালেঙ্কার দখলে। বিশ্বের এক নম্বর এই খেলোয়াড় প্রথম সেটে ৪-১ এগিয়ে যান, তাঁর শক্তিশালী সার্ভ এবং আক্রমণাত্মক খেলার জন্য। কিন্তু গফ হাল ছাড়েননি। তিনি টানা ১১ পয়েন্ট জিতে স্কোর ৪-৪ করে সমতায় ফেরেন। প্রথম সেট টাইব্রেকে গড়ায়, যেখানে সাবালেঙ্কা ৭-৫ এ জিতে প্রথম সেটটি নিজের নামে করেন
দ্বিতীয় সেটে গফ পুরোপুরি ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেন। তিনি সাবালেঙ্কার সার্ভ তিনবার ভেঙে ৬-২ স্কোরে সেটটি জিতে ম্যাচে সমতা ফেরান। তৃতীয় সেটে দুই খেলোয়াড়ই কঠিন লড়াই করেন। গফ প্রথমে এগিয়ে যান, কিন্তু সাবালেঙ্কাও পিছিয়ে পড়ে লড়াই চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত, গফ দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্টে জয় নিশ্চিত করেন যখন সাবালেঙ্কার শট আউট হয়ে যায়। জয়ের পর গফ মাটিতে শুয়ে পড়েন, আবেগে অভিভূত হয়ে।

গফের ঐতিহাসিক জয়
২১ বছর বয়সী কোকো গফ এই জয়ের মাধ্যমে ২০০২ সালে সেরেনা উইলিয়ামসের পর প্রথম আমেরিকান মহিলা হিসেবে ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতলেন। এটি তাঁর দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা, ২০২৩ সালে ইউএস ওপেন জয়ের পর। তিনি সেরেনা উইলিয়ামসের (২০০২) পর সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে ইউএস ওপেন এবং ফ্রেঞ্চ ওপেন উভয় শিরোপা জিতলেন এবং মারিয়া শারাপোভার (২০০৪-০৬) পর সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে বিভিন্ন সারফেসে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন।

সাবালেঙ্কার প্রতিক্রিয়া
ম্যাচ শেষে আরিনা সাবালেঙ্কা হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “এই হার সত্যিই খুব কষ্টের। পরিস্থিতি কঠিন ছিল, এবং ফাইনালে আমার টেনিস ভালো ছিল না। কোকো, অভিনন্দন, তুমি এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমার চেয়ে ভালো খেলেছ। দুই সপ্তাহ দারুণ কেটেছে, দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যামের জন্য অভিনন্দন, তুমি এটি প্রাপ্য।” সাবালেঙ্কা এটাও বলেন যে তিনি দর্শকদের সামনে খেলে উপভোগ করেছেন এবং টুর্নামেন্ট আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান

ম্যাচের পরিসংখ্যান
ম্যাচটি দুই ঘণ্টা ৩৮ মিনিট ধরে চলে। সাবালেঙ্কা ৭০টি আনফোর্সড এরর করেন, যা গফের ৩০টি এররের দ্বিগুণেরও বেশি। গফের গতি, প্রতিরক্ষামূলক খেলা এবং মানসিক দৃঢ়তা তাঁকে এই জয় এনে দেয়। এই ম্যাচে দুই খেলোয়াড়ই একে অপরের সার্ভ ভেঙেছেন, কিন্তু গফ নিজের সার্ভ ধরে রাখতে এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে পয়েন্ট জিততে সফল হন

পটভূমি
এই ফাইনালে বিশ্বের শীর্ষ দুই খেলোয়াড় মুখোমুখি হন, যা ২০১৮ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পর প্রথম। সাবালেঙ্কা সেমিফাইনালে চারবারের চ্যাম্পিয়ন ইগা শ্বিয়াতেককে ৭-৬ (৭-১), ৪-৬, ৬-০ স্কোরে হারিয়ে ফাইনালে ওঠেন। অন্যদিকে, গফ ফ্রেঞ্চ ওয়াইল্ডকার্ড লুইস বুয়াসোঁকে ৬-১, ৬-২ স্কোরে হারিয়ে তাঁর দ্বিতীয় ফ্রেঞ্চ ওপেন ফাইনালে জায়গা করে নেন। দুজনের মধ্যে এটি ছিল ১১তম মুখোমুখি লড়াই, যেখানে আগের ১০টি ম্যাচে দুজনেই ৫টি করে জয় পেয়েছিলেন

গফের প্রতিক্রিয়া
জয়ের পর গফ বলেন, “২০২২ সালে আমি এখানে ফাইনালে হেরেছিলাম, খুব নার্ভাস ছিলাম। এবার আমি আরও আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আরিনার বিরুদ্ধে খেলা কঠিন, তিনি আক্রমণাত্মক এবং শক্তিশালী শট খেলেন। আমি আমার সেরাটা দিয়েছি, এবং এই জয়ে আমি খুব গর্বিত।” তিনি দর্শকদেরও ধন্যবাদ জানান এবং বলেন যে তিনি ফ্রেঞ্চ দর্শকদের সমর্থন উপভোগ করেছেন

আগামীর সম্ভাবনা
এই জয়ের মাধ্যমে গফ ক্লে কোর্টে তাঁর শক্তি প্রমাণ করলেন। তিনি এই বছর মাদ্রিদ, রোম এবং রোলাঁ গারোসে ফাইনালে উঠে ক্লে কোর্টে সবচেয়ে স্থিতিশীল খেলোয়াড়দের একজন হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে, সাবালেঙ্কা এই বছর ৪০টি ম্যাচ জিতে এবং তিনটি শিরোপা জিতে ডব্লিউটিএ ট্যুরে আধিপত্য বজায় রেখেছেন, কিন্তু ক্লে কোর্টে তাঁর প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় এখনও অধরা রয়ে গেল

Source

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button